চাঁদা ও শ্রমে গড়া রাস্তা: অদালির আদিবাসী মানুষের উন্নয়নের বাস্তব ছবি!

✍️পুরুলিয়ার অদালি গ্রামের আদিবাসী মানুষ নিজেরা চাঁদা ও শ্রম দিয়ে বানালেন রাস্তা। সরকার যখন উন্নয়নের প্রচারে ব্যস্ত, তখন মানুষ দেখালেন বাস্তব উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব। এই প্রতিবেদন তুলে ধরে রাজনীতি বনাম বাস্তব জীবনের বাস্তবতা।

purulia adali gramer manush nijera banalen rasta

📅 প্রকাশের তারিখঃ জুন ২০২5
📍 **অঞ্চলঃ পুরুলিয়া, কাশীপুর, অদালি গ্রাম


🧱 মানুষই উন্নয়নের কারিগর!

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে যখন রাজ্যজুড়ে চলছে উন্নয়নের প্রচার 📢, ঠিক তখন পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের অদালি গ্রামের আদিবাসী মানুষ দেখালেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। 

সরকারি সাহায্য ছাড়াই নিজেরা চাঁদা তুলে ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে তারা তৈরি করলেন নিজেদের গ্রামের ঢোকার রাস্তাটি।

👣 রাস্তা না থাকায় জীবন ছিল দুর্বিষহ

অদালি একটি ১০০% আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। ৫০টিরও বেশি পরিবারে প্রায় ২২৩ জন ভোটার বসবাস করেন এখানে। এতদিন পর্যন্ত গ্রামের সঙ্গে বাইরের কোনো পাকা রাস্তা ছিল না। 

বর্ষায় জল জমে চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। মোটর বাইক তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতো চলাফেরা 🚫।

👶 অসুস্থ রোগী, 👩‍🍼 গর্ভবতী মা, 👴 বয়স্ক মানুষ — সবাইকে খাটিয়ায় চাপিয়ে নিয়ে যেতে হতো হাসপাতালে। কোনো অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ি বা আত্মীয়-স্বজন আসা-যাওয়াও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।


🤝 তিন দিনের পরিশ্রম, এক গ্রামের ঐক্য

সরকারের কাছে বহুবার ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান গ্রামের মানুষ। কেউ কথা রাখেননি, কেউ প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। 

তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের শতাধিক মানুষ — নারী-পুরুষ মিলে — মাত্র তিনদিনে নিজেরাই বানিয়ে ফেললেন রাস্তা!

🧱 মাটি কেটে, নিজেদের পয়সায় মোরাম কিনে তারা বানালেন সমতল রাস্তা। এতে অংশ নেন রূপাই মান্ডি, প্রশান্ত মুর্মু, বিনোদ বাস্কে, পানমনি টুডু, ঠাকুরমনি মুম্মু সহ বহু স্থানীয় মানুষ।

💬 তারা বলেন —

"আমরা আদিবাসী, আমাদের কথা কে শুনবে? সরকার শুধু উৎসবে ঢোল-ধামসা বাজিয়ে আর শাড়ি বিলিয়ে ভুলিয়ে রাখে। কিন্তু জীবন চলার জন্য তো রাস্তা দরকার!" 😢


🏗️ ভেঙে যাওয়া চেকড্যাম, ভেঙে পড়া আস্থা

গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাংরা নদীর উপর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল চেকড্যাম। কিন্তু সেটা প্রথম বর্ষাতেই ভেঙে যায়! 

ফলে রাস্তাও ভেসে যায় এবং পাশের মোহনডাঙ্গা গ্রামের নিরঞ্জন দাসের ৭ বিঘা জমি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। 😡


🔥 রাজনীতি বনাম বাস্তবতা

বিষয়টি রাজনীতির মোড় নেয়।
🗣️ বিজেপি বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা বলেন —

"একজন প্রভাবশালী শাসক দলের নেতার হস্তক্ষেপে বারবার এই রাস্তার টেন্ডার বাতিল হয়েছে।"

🗣️ সিপিএম নেতা অরুনোদয় ব্যানার্জী বলেন —

"চেকড্যামের মতো অপদার্থ পরিকল্পনায় টাকা নষ্ট করেছে সরকার। এই রাস্তা নিয়ে বহুবার ডেপুটেশন দিয়েছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি।" 😤

🗣️ তৃণমূল নেতা জীতেন টুডু যদিও বলেন —

"ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা জেলা পরিষদ ও কো-মেন্টরকে জানিয়েছি। পরের টেন্ডারে কাজ ধরা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।"

📢 বিডিও সুপ্রীম দাস আশ্বাস দিয়েছেন —

"পঞ্চায়েত সমিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।"


💔 উন্নয়ন শুধু কথায় নয়, কাজে দেখাতে হয়

যখন সরকার উন্নয়নের ঢাক বাজাচ্ছে, তখন এমন একটি গ্রামের মানুষ নিজেরাই রাস্তা তৈরি করে বুঝিয়ে দিলেন — প্রকৃত উন্নয়ন তখনই হয় যখন মানুষ নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নেয়।

🚜 এটা কেবল রাস্তা তৈরি নয় — এটা প্রতিবাদ, এটা প্রতিরোধ, এটা একটা বার্তা —

"আমাদের কথা কেউ না শুনলেও আমরা একজোট হলে নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে পারি!" 💪🔥


📌 সারাংশ:

বিষয়তথ্য
📍গ্রামের নামঅদালি, কাশীপুর ব্লক, পুরুলিয়া
👥 জনসংখ্যা৫০টির বেশি পরিবার, ২২৩ ভোটার
🚫 সমস্যারাস্তাহীনতা, বর্ষায় চলাচল বন্ধ
🛠️ সমাধাননিজেরা মাটি কেটে ও চাঁদা তুলে রাস্তা তৈরি
💬 অভিযোগপ্রশাসন ও শাসক দলের পক্ষ থেকে অযোগ্যতা ও অবহেলা
🧱 উন্নয়নবাস্তব উন্নয়ন মানুষের ঐক্য ও পরিশ্রমে


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url