কেবলমাত্র সাইকেল নিয়ে রাশিয়া পাড়ি দিলেন পুরুলিয়ার অক্ষয় ভগত।

পুরুলিয়া থেকে রাশিয়া—সঙ্গী কেবল একটি সাইকেল। সাত মাসে সাতটি দেশ ঘুরে রাশিয়ার বৈকাল হ্রদের সামনে পৌঁছে গিয়েছেন ২৭ বছরের অক্ষয় ভগত।

 cycle e russia akshay

পুরুলিয়া থেকে রাশিয়া। সঙ্গী সাইকেল। সাত মাসে সাতটি দেশ ঘুরে পৌঁছেছেন বৈকাল হ্রদের সামনে। এই অভিনব অ্যাডভেঞ্চার যাত্রা পুরুলিয়ার ২৭ বছরের অক্ষয় ভগতের।

গত বছর ২২ নভেম্বর পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি থেকে সাইকেল চালানো শুরু করেন অক্ষয়। আসেন কলকাতায়। তারপরে বিমানে পাড়ি দেন থাইল্যান্ড। ভারতীয়দের জন্য ভিসা ফ্রি হওয়ায় সে দেশে সাইকেল নিয়ে ঘুরে দেখতে কোনও সমস্যা হয়নি অক্ষয়ের। 

এরপরে সাইকেল নিয়েই ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, চিন, মঙ্গোলিয়া ঘুরে সোজা পৌঁছেছেন রাশিয়া। যে সব দেশ বিমানে চেপেও পৌঁছনো যায়, সেখানে সাইকেলে চালিয়ে কেন ঘুরে দেখলেন?

বৈকাল হ্রদের সামনে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে অক্ষয় ফোনে বলেন, ‘ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখতাম পৃথিবী ঘুরে দেখব। কিন্তু সেই সামর্থ্য ছিল না। ঠিক করলাম, ইচ্ছে আছে যখন সাইকেল নিয়েই বেড়িয়ে পড়া যাক।' 

অযোধ্যা পাহাড়ের বুরদা গ্রামের বাসিন্দা অক্ষয়। ছেলেবেলায় দুধ, খবরের কাগজ, লটারির টিকিট বিক্রি করে বেড়ে ওঠা। মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা হয়নি। কিন্তু বই পড়া ছাড়েননি। 

‘চাঁদের পাহাড়' পড়েই ঠিক করেছিলেন একদিন খুঁজে বের করবেন চাঁদের পাহাড়। তার পরেই শুরু সাইকেল নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার। প্রথম থেকেই বাবা ও বড়দিদি ছিলেন অক্ষয়ের ‘সাপোর্ট সিস্টেম'।

অক্ষয় ভগতের কথায়, '২০১৮ সালে পকেটে ২ হাজার টাকা নিয়ে প্রথম সাইকেল নিয়ে ভারত ভ্রমণে বেরোই। কাশ্মীর টু কন্যাকুমারী ৪০১ দিনে শেষ করি। যখন বাড়ি ফিরি তখনও পকেটে ওই ২ হাজার টাকা।

ভারতবর্ষে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার অভাব হয় না। কিন্তু বিদেশে ঘোরা সহজ নয়।' তাও মনের জোর ও অদম্য ইচ্ছে নিয়ে 2022-এ সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন চাঁদের পাহাড়ের খোঁজে। 

পাড়ি দেন কেনিয়া। মুখোমুখি হন ডাকাতির। তা-ও দমে যাননি। সাইকেল নিয়ে ঘুরে দেখেন কেনিয়া, মাসাইমারা, তানজানিয়া। অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে পায়ে হেঁটে উত্তরপ্রদেশ থেকে রামেশ্বরম হয়ে যান শ্রীলঙ্কা। এরপর ২০২৪-এর নভেম্বর গন্তব্য রাশিয়া।

থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, চিন, মঙ্গোলিয়া ঘুরে রাশিয়া। পথ হারিয়েছেন, বিপদেও পড়েছেন। কিন্তু প্রতিবার প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়েছেন। 

তাঁর বক্তব্য, ‘এমনও দিন গিয়েছে আমি দিনে একবার খাবার খেয়েছি, জুতো-ব্যাগ ছিঁড়ে গিয়েছে। এমনকী টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু থেমে থাকিনি।' 

তবে ভিসা পেতে কখনওই সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন ‘সাইকেলম্যান'। অক্ষয় বলেন, 'আমি যে দেশে পৌঁছতাম, প্রথমে ভারতের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। তারাই সাহায্য করত ভিসার জন্য।'

পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে গাইডের কাজ করেন অক্ষয় ভগত। জমানো পুঁজি এবং ব্যাঙ্ক থেকে দু'টো লোন নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছেন বিশ্ব ভ্রমণে। 

অক্ষয় ভগতের মন্তব্য, ‘সাত মাস পরে রাশিয়া পৌঁছে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিছু দিন বিশ্রাম নিতে চাই। বাড়ি ফিরব, কাজাখাস্তান হয়ে।'

অক্ষয় ভগতের এই ভ্রমণ কেবলমাত্র একটি সাইকেল ট্রিপ নয়, এটি এক অদম্য মানসিক শক্তি, স্বপ্নপূরণ এবং সীমাহীন সাহসের প্রতিচ্ছবি। 

অযোধ্যার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বৈকাল হ্রদের তট পর্যন্ত তাঁর যাত্রা আমাদের দেখায়—স্বপ্ন যদি বিশাল হয়, পথ আপনিই খুলে যায়। 

আর্থিক সংকট, শারীরিক কষ্ট, বিদেশের অজানা পথ—সবকিছু জয় করে তিনি আজ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা। 

অক্ষয়ের মতো সাধারণ মানুষের অসাধারণ সাহসিকতা আমাদের শেখায়, সুযোগের অপেক্ষা না করে নিজের পথ নিজেই তৈরি করে নিতে হয়। আমরা কামনা করি তাঁর আগামী পথ আরও সুন্দর ও সাফল্যময় হোক।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url