আইপ্যাকের প্রার্থী বাছাই নিয়ে পুরুলিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের ক্ষোভ।

পুরুলিয়ায় তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে আইপ্যাকের একচ্ছত্র ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে ঘাসফুল কর্মীরা। নেতাদের না ডেকে কর্মীদের বাদ দিয়ে চলছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ — বাড়ছে দলীয় কোন্দল ও অভ্যন্তরীণ বিভাজন।

 ipack er prarthi bachai niye khobh purulia tmc kormider

দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জীকে পিছনে রেখে রাজ্যে নিঃশব্দ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস দলের সেনাপতি অভিষেক ব্যানার্জী। পুরুলিয়া জেলায় নিঃশব্দ বিপ্লব করতে এসে শুরু হয়েছে সশব্দ কোলাহল। 

নিঃশব্দ বিপ্লবের নামে আইপ্যাক ওরফে এবিপ্যাকের জনা পাঁচেক সদস্য ঘুরছেন অঞ্চলে অঞ্চলে। এলাকায় গিয়ে কোন এক নেতার ঘরে বা স্থানীয় পার্টি অফিসে এক-একজন করে ডাকা হচ্ছে অঞ্চল প্রধান, উপপ্রধান ও বাছাই করা কয়েকজন নেতাকে। 

ঘরে ঢোকানো হচ্ছে মোবাইল ফোন বন্ধ করে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে সেই বিধানসভা এলাকায় কাকে প্রাথী হিসাবে দেখতে চান তারা। এই আলাপচারিতায় ডাকা হচ্ছে না কর্মীদের। যে কারনে কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। 

তাদের কথা দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জী মুখে বলছেন কর্মীরা দলের সম্পদ। অথচ যখন প্রার্থী ঠিক করার বিষয় আসছে তখন জেলা স্তরের নেতাদের গুরুত্ব না দিয়ে প্রার্থী বাছাই করতে আসছে বহিরাগত আইপ্যাক ওরফে অভিষেক ব্যানার্জী প্যাকের সদস্যরা। 

মতামত জানতে শুধু ডাকা হচ্ছে নেতাদের,কর্মীদের নয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা আরও অভিযোগ করেন আইপ্যাক বা এবিপ্যাকের বাছাই করা প্রার্থীর জন্য কালঘাম ছুটিয়ে আমরা জেতাবো তাকে। 

জয়ের পর বিধায়ক হয়ে উনি চিনবেন শুধু ঠিকাদারদের কাটমানী খাওয়ার জন্য। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা তখন হয় চক্ষুশূল। 

এমন প্রার্থীদের মানবো কেন? বছরের ৩৬৫দিন আমরা দলের কর্মীরা চষে বেড়াচ্ছি এলাকা। 

মানুষের সমস্যায় তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি,পঞ্চায়েত ও ব্লকে নিয়ে গিয়ে তাদের কাজ করিয়ে দিচ্ছি।

কারো রেশন সমস্যা হলে সে দিকে দেখছি। অথচ প্রকৃত সময়ে আমরা গুরুত্ব পাচ্ছি না দলে।২০২১সালে পুরুলিয়া জেলায় কর্মীদের গুরুত্ব না দেওয়ায় পাড়া,পুরুলিয়া, কাশীপুর, রঘুনাথপুর,জয়পুর ও বলরামপুর ৬টি আসন হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের।

নেত্রীর দেওয়া কর্মসূচী তোমার ঠিকানা উন্নয়নের নিশানা দিয়ে যখন গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে যাচ্ছি তখন মহিলারা ক্ষোভ জানাচ্ছেন মদের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী আবাস না পাওয়ার বিরুদ্ধে,রাস্তা নাই,শিক্ষা নাই। প্রবল | বর্ষণেও পাণীয় জল নাই। 

আমাদের কাছে মানুষের প্রশ্নের উত্তরও নেই। এভাবে চললে ২০২১এ আমরা ৬টি আসন হেরেছিলাম। এবার ৯টাতেই হারাবো।শুধু কর্মী নয় তৃণমূল দলে নেতাদের মধ্যেও শুরু হয়েছে ব্যাপক কোন্দল। 

বৃহস্পতিবার বলরামপুর ব্লক তৃণমূলের পক্ষ থেকে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় দেখা গেল না দলের পঞ্চায়েত | সমিতির বিক্ষুব্ধ সদস্যদের কাউকে। প্রস্তুতি সভাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠলো বিভাজন। 

কয়েকদিন আগে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে দলের বর্ষীয়ান নেতা সুজয় ব্যানার্জী পুঞ্চায় তার ১০টি অঞ্চলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে করলেন বিরাট মিছিল। পুঞ্চা কৃষক বাজারে করেছিলেন সভা। 

সেদিন সেই সভায় দেখা যায়নি এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু,গুরুপদ টুডু,দলের পুঞ্চা ব্লক সভাপতি সহ বেশ কিছু নেতাকে। 

সুজয় ব্যানার্জীকে পাল্টা ক্ষমতা দেখাতে রবিবার মানবাজার রাধামাধব হাইস্কুলে মানবাজার বিধানসভার পুঞ্চা-১০,মানবাজার-১০ ও হুড়ার ৩ মোট ২৩টি অঞ্চলের নেতাদের নিয়ে সভা করলেন সন্ধ্যারানী টুডু ও গুরুপদ টুডু। 

ডাক পেলেন না সুজয় ব্যানার্জী,কৃষ্ণপদ মাহাতদের মত তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রবীন নেতারা। যদিও এই সভাকে পাল্টা সভা না বলে ২১ জুলাই এর প্রস্তুতি সভা হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। 

পুঞ্চা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অশোক মাহাত, মানবাজার তৃণমূল ব্লক সভাপতি অপুর্ব সিং বলেন,২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতির জন্য ডাকা হয়েছে আজকের সভা। 

সঙ্গে এলাকার বেশ কিছু বেহাল রাস্তা সংস্কারের বিষয়েও হয় আলোচনা।সভার আহ্বায়ক তথা বিধায়ক ও মন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু বলেন,২৩টি অঞ্চলের নেতা কর্মীদের নিয়ে ডাকা হয়েছিল ২১জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা।

আরও পড়ুন : কেবলমাত্র সাইকেল নিয়ে রাশিয়া পাড়ি দিলেন পুরুলিয়ার অক্ষয় ভগত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url