পুরুলিয়াতে তৃণমূলের নেতৃত্ব পরিবর্তন ঘিরে হতাশা, প্রশ্ন উঠছে 'পরিবর্তন' কতটা সত্যি?

তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্বে আংশিক রদবদল হলেও, নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভ এখনো মেটেনি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ার ৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে পরাজয়ের পরে, ২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাফল্য দেখে দল আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। 

কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে আবারও হতাশ করেছে ফলাফল। পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাত।

purulia trinamool netritto

ফল ঘোষণার পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, যাদের কারণে পরাজয়, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কর্মীদের চাহিদা ছিল জেলা, ব্লক এবং অঞ্চল স্তরের নেতৃত্বে রদবদল। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছিল, নতুন কমিটির তালিকা পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদনের পর ঘোষণা হবে।

এক বছরের অপেক্ষার পর রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদনে বদল হলো শুধু জেলা সভাপতি এবং চেয়ারম্যান পদে। 

হংসেশ্বর মাহাতর পরিবর্তে চেয়ারম্যান হলেন শান্তিরাম মাহাত, আর সৌমেন বেলথরিয়ার জায়গায় জেলা সভাপতি হলেন বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব লোচন সোরেণ। তবে অঞ্চল ও ব্লক স্তরে কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় হতাশা ছড়িয়েছে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে।

তাদের দাবি, মাত্র ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন প্রার্থী শান্তিরাম মাহাত, যার প্রধান কারণ অভ্যন্তরীণ কোন্দল। 

তিনটি পুরসভা এলাকায় পরাজয় হয়েছে দলের। ঝালদা ও রঘুনাথপুর পুরসভায় তৃণমূলের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেসব পঞ্চায়েতে ভোটে হেরেছে দল, সেখানকার নেতা ও প্রধানদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দলের ঘোষিত ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতিও কার্যত অমান্য হয়েছে বলে অভিযোগ। কারণ রাজীব লোচন সোরেণ একইসাথে বিধায়ক এবং জেলা সভাপতি — পাশাপাশি তিনিই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানও।

অভিযোগ উঠছে, জেলার নিজস্ব কোনো পার্টি অফিস নেই। প্রতিটি জেলা সভাপতি নিজের ইচ্ছেমতো ভাড়াবাড়িতে পার্টি অফিস তৈরি করেন। 

ঝালদা ও রঘুনাথপুর মহকুমা থেকেও দাবি উঠেছিল জেলা সভাপতি হওয়ার, যা অগ্রাহ্য হওয়ায় স্থানীয় নেতৃত্বে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

মাত্র ১০ মাস পরেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্য নেতৃত্ব একদিকে আদিবাসী ভোট টানতে রাজীব লোচন সোরেণকে সভাপতি করেছে, অন্যদিকে কুড়মি ভোটের জন্য শান্তিরাম মাহাতকে ফের সামনে এনেছে। কিন্তু কর্মীরা বলছেন, নতুন মুখের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় উৎসাহে ভাটা পড়ছে।

চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাত বলেছেন, “দল যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করব। ২০২৬-এ আমরা জিতব।” কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ছন্নছাড়া সংগঠনকে এক করে শক্তিশালী বিরোধীদের সঙ্গে কতটা লড়তে পারবে তৃণমূল, তা সময়ই বলবে।

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url