আমেরিকার বিদেশনীতি ও ভারত: দৃশ্যপটের অন্তর্জালে চলমান এক দ্বন্দ্ব।
📰 আমেরিকার বিদেশনীতিতে ভারত-পাকিস্তানকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শীতল দ্বন্দ্ব ও কূটনৈতিক চালচিত্র। ভারতকে চাপে রাখতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে কাজে লাগানোর নীতির পিছনের বাস্তবতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্লেষণমূলক সম্পাদকীয়।
আমেরিকার বিদেশনীতি এবং ভারতবর্ষ
🔍 ভূমিকা:
আমেরিকার বিদেশনীতি বিশ্বব্যাপী রাজনীতির চালচিত্রে এক অনিবার্য প্রভাবক। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে তার কৌশলগত অবস্থান ও রাজনৈতিক অগ্রাধিকার বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই অঞ্চলে তারা কখনো সরাসরি, কখনো পরোক্ষভাবে কূটচাল চালিয়ে এসেছে নিজেদের স্বার্থে।
⚖️ ইমরান খানের পতন: এক মার্কিন কূটনৈতিক চিত্র
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের চীনের প্রতি ঝোঁক ছিল সুস্পষ্ট। কিন্তু এটি যে আমেরিকার পছন্দ হয়নি তা ইমরান খানের সরকারের পতনেই প্রতিফলিত হয়েছে। এরপর মার্কিন সমর্থনে শেখ শাহবাজের উত্থান এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে আমেরিকার হস্তক্ষেপ ছিল সম্পূর্ণ প্রয়োজনে ঘেরা।
🕵️ সন্ত্রাসবাদ: 'ভালো' এবং 'খারাপ' এর মার্কিন সংজ্ঞা
আমেরিকার কাছে সন্ত্রাসবাদ দুই প্রকার—
-
❌ খারাপ সন্ত্রাস – যারা তাদের স্বার্থে আঘাত করে
-
✅ ভালো সন্ত্রাস – যারা তাদের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে সহায়ক
এজন্যই তারা জানে যে পাকিস্তান IMF ও ADB থেকে পাওয়া ঋণ মূলত সন্ত্রাসবাদ চাষে ব্যয় করবে, তবুও সেই লোন পাইয়ে দেয়।
🔫 কাশ্মীরে অস্থিরতা: মার্কিন স্বার্থে লাভজনক
কাশ্মীরে যখন অশান্তি থাকে, তখন ভারতকে সৈন্য মোতায়েন করতে হয়। এর মাধ্যমে পশ্চিম সীমান্তে ভারতের মনোযোগ আটকে রাখা যায়। আমেরিকার দৃষ্টিতে এটি কৌশলগতভাবে লাভজনক—ভারত ব্যস্ত, চীন চাপে।
🔄 ভারত-পাক-চীন: এক রাজনৈতিক ব্যালান্সিং অ্যাক্ট
আমেরিকা পাকিস্তানকে সামরিকভাবে 'তুলে ধরে' ভারতকে চাপে রাখতে চায়, আবার ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে ব্যবহার করে চীনকে ঠেকাতে চায়। এটি একরকম ঢেলা দিয়ে ঢেলা ভাঙ্গার বিদেশনীতি।
👁️🗨️ মোদী সরকারের কঠোর অবস্থান এবং মার্কিন অসন্তুষ্টি
বর্তমান ভারত সরকার—মোদীজীর নেতৃত্বে—নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতির পথে চলেছে। আমেরিকার মনঃপূত নয় এমন এই 'বলিষ্ঠ' নেতৃত্ব তাদের অস্বস্তির কারণ। তারা সবসময় চায় একটি দুর্বল জোট সরকার, যাতে হস্তক্ষেপ করা যায় সহজে।
💼 জর্জ সোরোস, ডিপ স্টেট এবং নির্বাচনী হস্তক্ষেপ
আমেরিকান ডিপ স্টেট ও তাদের ছায়াসংগঠনগুলি—যেমন জর্জ সোরোসের প্রতিষ্ঠানগুলো—ভারতে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট থেকেছে। তবে বর্তমান সরকার এখনও পর্যন্ত সেই চক্রান্তের কাছে মাথা নত করেনি।
🕊️ নেহেরু থেকে মোদী: এক ধারাবাহিক নীতি
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সময় থেকেই একটি রাশিয়া-ঘেঁষা, জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। মোদীজীর আমলেও সেই ধারা বজায় রয়েছে, যদিও পরিবেশ, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে অনেকখানি।
🔚 উপসংহার:
ভারতীয় উপমহাদেশে আমেরিকার বিদেশনীতি কখনোই সরলরৈখিক নয়। এটি ক্ষমতার ভারসাম্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও ভূরাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজির জটিল সমন্বয়। মোদীর ভারত সেই সমীকরণে নিজস্ব বলিষ্ঠ অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এবং এটাই আজকের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংঘর্ষের উৎস।
🌐 সম্পাদকের দৃষ্টিকোণ থেকে:
আমাদের পাঠকদের মনে রাখা জরুরি, আন্তর্জাতিক কূটনীতি কখনোই একমাত্রিক নয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আজকের এই বিশ্বরাজনীতি ও ভারতের অবস্থান এক নব জাগরণের ইঙ্গিত বহন করছে।
🖋️ লেখা: সম্পাদকীয়, আজকের পুরুলিয়া
📅 প্রকাশিত: ১৯ জুন, ২০২৫