ঘর ভেঙে নিরাশ্রয় মানুষ প্রসাদ বিলিতে প্রশাসন।

একটানা বৃষ্টিতে পুরুলিয়াতে অনেক মানুষের ঘর ভেঙে গেছে।  অনেক মানুষ এখনো আশ্রয়হীন। আর প্রশাসন সেখানে গজা আর পেড়া প্রসাদ বিলিতে ব্যাস্ত।  

আষাঢ় মাসের প্রথম রাত থেকে জেলা জুড়ে কয়েকদিন ধরে বর্ষণে গৃহহীন হল ৮৫টি পরিবার। জলের তোড়ে প্রাণ গেল ৩জনের। 

পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘরে জল ঢুকে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হল বহু পরিবারকে।

ghor venge nirashray prosad bili prashashon


শহরের কিছু এলাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আসতে হল দমকল বিভাগকে। ডাকতে হল বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। 

এমন যখন অবস্থা সারা জেলার মানুষের তখন প্রশাসন ত্রান বিলি করার বদলে ব্যস্ত হয়েছে দীঘায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন করা মন্দিরের প্রসাদের নামে গজা আর পেঁড়া বিলি করতে। 

হুড়া থানার রখেড়া-বিশপুরিয়া অঞ্চলের অঙ্গারডি গ্রামের ষাটোদ্ধ বৃদ্ধা সনকা মাহাত। ২বছর আগে স্বামী মারা গেছে। 

৩টি মেয়ে সবার বিয়ে হয়ে গেছে। বৃদ্ধার সম্বল বলতে থাকার জন্য ছিল একটি মাটির ঘর। পেট ভরার জন্য কেন্দ্র সরকারের বিনামূল্যের রেশন সঙ্গে বিধবাভাতার টাকা টুকু। 

এমন গরীব বৃদ্ধার কপালে জুটে নি প্রধানমন্ত্রী আবাস বা মুখ্যমন্ত্রীর বাংলার বাড়ী। বৃদ্ধার অসহায় অবস্থার কথা নিজে চোখে দেখে তৃণমূল অঞ্চল যুব সভাপতি বিকাশ কালিন্দী বলেন,আমার ক্ষমতা কতটুকু।ছবি তুলে নেতাদের কাছে পাঠিয়েছি। যদি কিছু সুরাহা হয়। 

বৃদ্ধা সনকা মাহাতুর কথা বিনা পয়সায় চাল পাচ্ছি। রান্না করার জায়গা পাচ্ছি না। একটা ত্রিপালও যদি দিত তার নীচেই না হয় পড়ে থাকতাম। 

সেটুকুও কেউ দেয় নি।টানা বর্ষণে মাটির বাড়ী ভেঙ্গে গেছে বলরামপুর থানার বাঘাড়ি গ্রামের বিধবা বৃদ্ধা সন্ধ্যা কুমার-এর।বাড়ী মেরামত করার সামর্থ বৃদ্ধার নেই। চোখের জল ফেলতে ফেলতে বললেন,পঞ্চায়েত,ব্লক,এলাকার নেতাদের অনেকবার বলেছি।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় একটা ঘরে দেবার কথা। দিল না। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া বাংলার বাড়ীও আমাকে দিল না। থাকবো কোথায় বুঝতে পারছি না। 

বাঘমুন্ডি ব্লকের শালডাবরার ভাঙ্গা পুল ভেসে গেছে জলের তোড়ে। যাতায়াত বন্ধ বোরো থানার আঁকরোতে সেতুর উপর দিতে বইছে জল। 

একই অবস্থা বান্দোয়ানের কুইলাপালেও। আড়ষা থানার গন্ধবাজার গ্রামের |সুজি রাজোয়াড়ের মাটির ঘর ভেঙ্গে পড়েছে এই বর্ষায়। 

সুজি রাজোয়াড় বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাসের জন্য দুয়ারে সরকারে প্রতিবার কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিছু হয়নি। বাংলার বাড়ীও দেয়নি। 

এখন স্বামী,ছেলে মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে ছাড়া থাকার কোন জায়গা নেই। পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ ব্লক মিলে ভেঙ্গেছে সরকারী হিসাব অনুযায়ী ৮৫টি ঘর। 

ডুবেছে শহরের সাধুডাঙ্গা,ডিগুডিপাড়া, নিমটাড়, মুনসেফডাঙ্গা,সূর্যসেন | পল্লী,অমরেশ পল্লী সহ শহরের বহু এলাকা। সাধুডাঙ্গার মানুষকে উদ্ধার করতে হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। আসে দমকল। 

বিষয়টি নিয়ে সিপিএম দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় জানান, দিদি-মোদি এখন ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। একজন দীঘায় মন্দির বানালেন আরেক জন অযোধ্যায়। 

গজা আর পেঁড়া বিলি করে ভগবানকে ভক্তি দেখাচ্ছেন। অথচ অসহায় মানুষকে ত্রান দেবার জন্য দিদির প্রশাসন একটা ত্রিপাল পর্যন্ত দিতে পারছে না। 

অসহায় মানুষকে স্কুল ঘরে রেখে দিয়ে দায় সারছে। কংগ্রেস দলের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাত বলেন, মাথার উপর একটা ছাউনি নাই।পেটে অন্নদেবার মত রান্নার সংস্থান নাই। এমন পরিবারগুলির হাতে ধর্মের নামে ধরানো হচ্ছে একটি করে গজা আর একটি করে পেড়া।  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url