৪২ লক্ষ টাকার সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র তালাবন্ধ, গাছতলায় চলছে মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা!

পুরুলিয়া জেলার বরাবাজার ব্লকের অন্তর্গত বাজড়া গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি স্থায়ী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

প্রসূতি মা ও শিশুদের সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ও টিকাকরণ প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করতেই এই দাবি বারবার জানানো হয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের কাছে। 

bajra gramer swasthyakendra tala bondho

দাবি মেনে রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় একটি আধুনিক ও ঝাঁ চকচকে সু-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু উদ্বোধনের অভাবে সেই ভবনে দীর্ঘ দশ বছর ধরে তালা পড়ে রয়েছে

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির লক্ষ্য ছিল গ্রামে থাকা মায়েদের নিরাপদ ডেলিভারি পরবর্তী স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নবজাতকদের টিকাকরণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা। 

কিন্তু সেই ভবনের সদ্ব্যবহার না হওয়ায় আজও বাজড়া গ্রামের মায়েরা ও শিশুদের চিকিৎসা হচ্ছে গাছতলায়, খোলা আকাশের নিচে, চরম গরমের মধ্যে বসে।

চিকিৎসা হচ্ছে গাছতলায়:
প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ২-৩ মাসের শিশু সন্তানদের কোলে নিয়ে খোলা মাঠে বসে থাকতে হচ্ছে মায়েদের। গাছতলার ছায়ায় চলছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাকরণ। 

নেই কোনো বিশ্রামের ব্যবস্থা, নেই ওষুধপত্র সংরক্ষণের সুবিধা। স্বাস্থ্যকর্মী ও আশা কর্মীরা ওষুধ নিয়ে যেতে হচ্ছে ব্যাগে করে, যা কখনও কখনও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জমা দিয়ে আসতে হয়।

গ্রামের বাসিন্দা সুধীর ঘাসীদয়াময় সিংহ জানিয়েছেন, “বাজড়া গ্রামে আগে কোনো উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল না। মা ও শিশুদের নিয়মিত চিকিৎসার জন্য যেতে হত ৬–৭ কিমি দূরের পুড়িয়ারা গ্রামে। কিন্তু সড়ক অবস্থা এতটাই খারাপ যে গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যজাত শিশুদের নিয়ে যাতায়াত করাই অসম্ভব হয়ে পড়ে।”

তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, বহুবার পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের দারস্থ হয়েও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এমনকি স্বাস্থ্য দপ্তরও কার্যত নীরব। 

একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গ্রামীণ সমস্যা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিচ্ছেন, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত ব্লক নেতৃত্ব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুমিতা সিংহ মল্ল জানিয়েছেন, “সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এখনও হ্যান্ডওভার হয়নি, যার ফলে চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে শীঘ্রই এটি চালু করা হবে এবং পরিষেবা প্রদান শুরু হবে।”

প্রশ্ন উঠছে:

  • কেন ৪২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১০ বছর ধরে তালাবদ্ধ?

  • কেন এখনো হ্যান্ডওভার সম্পন্ন হয়নি?

  • কেন গ্রামীণ মহিলাদের ও শিশুদের এত কষ্টে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর চাইছে বাজড়া গ্রামের সাধারণ মানুষ। তারা চায়, অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করে গ্রামের মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url