মদ নয়, চাই কর্মসংস্থান — হুড়ায় মহিলাদের প্রতিবাদে কাঁপল প্রশাসন।

হুড়া ব্লকের কলাবনী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রান্তিক জনপদগুলোয় নতুন করে জেগে উঠেছে এক সাহসী ও প্রয়োজনীয় প্রতিবাদ—মদ নয়, চাই কাজ। 

যখন রাজ্যের বহু এলাকা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প বন্ধের জেরে কর্মহীনতার ভারে নুয়ে পড়েছে, তখন এই এলাকার মহিলারা হাতে তুলে নিয়েছেন প্রতিরোধের ব্যাটন। 

hura mohilar protest mod birodhi

শুধু মুখে নয়, পথে নেমে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন—বেকারত্ব আর মদের নেশা একত্রে কোনও সমাজকে রক্ষা করতে পারে না।

কলাবনী, পড়াশীবনা, কৈনাড়ু মা, রখেড়া-বিশপুরিয়া—এই সব অঞ্চলগুলোর মহিলারা একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছেন "পড়াশীবনা মাদক বিরোধী সংগ্রাম কমিটি"। মিছিল, স্লোগান, পোস্টার—সব কিছুর মাধ্যমে তাঁরা প্রশাসনকে চেপে ধরেছেন। 

দাবী একটাই—গ্রামে ঢালাও মদ বিক্রি বন্ধ হোক, মদের লাইসেন্স বন্ধ হোক, আর ফিরে আসুক কর্মসংস্থানের সুযোগ।

এটা কেবল একটি সমাজিক আন্দোলন নয়—এ এক সামাজিক বিপ্লবের সূচনা। যখন প্রশাসন ও রাজনীতির মদতপুষ্ট মদের ব্যবসা গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে বিষিয়ে তুলছে, তখন এই মহিলারা বুক চিতিয়ে বলছেন, "মদ ছাড়া কি পেশা নাই?" তাঁদের এই প্রশ্ন সরাসরি সরকারের গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত করে।

পুলিশ প্রশাসন প্রথমদিকে উদাসীন থাকলেও, মহিলাদের লাগাতার আন্দোলনের চাপে তারা অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছে। 

বাজেয়াপ্ত হয়েছে চোলাই মদ, ভেঙে ফেলা হয়েছে বেআইনি ভাটি, উদ্ধার হয়েছে মদ তৈরির সামগ্রী। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এ পদক্ষেপ কতদিন স্থায়ী হবে? মূল ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ছাড়া কি আদৌ বন্ধ হবে মদের এই অবাধ ব্যবসা?

এই আন্দোলন শুধুমাত্র মদের বিরুদ্ধে নয়—এ এক আর্তনাদ কর্মসংস্থানের জন্য, এক দাবি জীবনের সম্মান রক্ষার জন্য। 

সরকার যদি সত্যিই জনস্বার্থে কাজ করতে চায়, তবে এই আন্দোলনের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিতেই হবে। মদের লাইসেন্স দেওয়ার আগে সরকারকে ভাবতে হবে, সেই গ্রামে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ—এসব কিছুর কী অবস্থা?

হুড়ার এই সাহসী মহিলারা দেখিয়ে দিলেন, সমস্যা যত গভীরই হোক না কেন, একতা আর প্রতিবাদের শক্তিতে তা বদলানো সম্ভব। প্রশাসনের এখন সময় এসেছে—মদ নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url