শিক্ষক আন্দোলন ও ডিএ মামলায় শাঁকের করাতে রাজ্য সরকার।

✍️ বিগত সপ্তাহে রাজ্য রাজনীতিতে দুটি ঘটনা প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রথমটি ১৫ মে, বৃহস্পতিবার কলকাতার সল্টলেকের বিকাশ ভবনে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন। 

দ্বিতীয়টি ১৬ মে, শুক্রবার, সর্বোচ্চ আদালতে সরকারি কর্মীদের ডিএ (মহার্ঘ্য ভাতা) সংক্রান্ত রায়দান। দুটি ঘটনাই তৃণমূল সরকারকে চূড়ান্ত বেকায়দায় ফেলেছে।

shanker karate rajyo sarkar

📌 এস.এস.সি দুর্নীতি ও শিক্ষক আন্দোলন

৩ এপ্রিল ২০২৫-এ, এস.এস.সি-র ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। কারণ—রাজ্য সরকার যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ। 

সিবিআই জানায়, প্রায় ৮ হাজার নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। পরবর্তীতে চাকরিচ্যুত প্রার্থীরা আন্দোলনে নামেন। প্রথমে ২১–২৪ এপ্রিল এস.এস.সি ভবনের সামনে, এরপর ৭ মে থেকে বিকাশ ভবনে অবস্থান।

১৫ মে, ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর ডাকে বিকাশ ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে হাজির হন সহস্রাধিক চাকরিচ্যুত শিক্ষক। মূল ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের একাংশ ঢুকে পড়েন ভবনে। 

শাসক দলের নেতা সব্যসাচী দত্ত সেখানে গেলে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশি হস্তক্ষেপে রাত পর্যন্ত চলে অভিযান—লাঠিচার্জ, টানা-হ্যাঁচড়া, রক্তাক্ত অবস্থায় আহত আন্দোলনকারীদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে।

🗨️ শাসক নেতাদের প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

ঘটনার পরে শাসক দলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেন, “আন্দোলনে সুপ্রিম কোর্টের রায় বদলায় না।” অন্যদিকে কুনাল ঘোষ বলেন, “টিভি ক্যামেরা দেখে নাটক করছে আন্দোলনকারীরা।” শিক্ষক সমাজের উপর এই ধরনের মন্তব্য রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় তোলে।

⚖️ ডিএ মামলা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

পরের দিন, ১৬ মে, সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়—চার সপ্তাহের মধ্যে ২৫ শতাংশ ডিএ দিতে হবে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। 

দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের কাছে এটি আংশিক জয় হলেও রাজ্য সরকারের জন্য এক বিশাল আর্থিক চ্যালেঞ্জ।

🚨 শাঁকের করাতে রাজ্য প্রশাসন

দুই দিক থেকেই রাজ্য সরকার এখন কোণঠাসা। একদিকে দুর্নীতির কারণে চাকরি হারানো হাজার হাজার শিক্ষক, অন্যদিকে আদালতের রায়ে আর্থিক চাপ। 

৮ হাজার অযোগ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের রক্ষা করতে গিয়ে ১৮ হাজার শিক্ষিত প্রার্থীকে বলি হতে হয়েছে। 

একইসাথে রাজ্য সরকারের তীব্র আর্থিক সংকটের মাঝে ১০ হাজার কোটি টাকার ডিএ দেওয়া প্রায় অসম্ভব এক চ্যালেঞ্জ।

এই পরিস্থিতিতে সরকার যা-ই করুক না কেন, একদিকে চাকরিহারাদের ক্ষোভ, অন্যদিকে সরকারি কর্মীদের চাপ—রাজ্য সরকার যেন শাঁকের করাতে পড়ে আছে। সামান্য অসতর্কতা বড় মাশুল দিতে বাধ্য করতে পারে শাসক দলকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url