ভোটের গণিত: শূন্য থেকে ক্ষমতার শিখরে।

রাজনীতির অঙ্ক নিছক গাণিতিক সূত্র মেনে চলে না। রামানুজন বা আর্যভট্টর মতো বিশ্বখ্যাত গণিতবিদরাও যদি রাজনৈতিক অঙ্ক কষতেন, তবে হয়তো তাঁরা শূন্যই পেতেন! 

কারণ, রাজনীতির অঙ্ক কখনোই একরৈখিক নয়—এখানে ক্ষমতা নির্ভর করে সমীকরণ বদলের উপর।

voter ganit

স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্কে পরিণত করতে সচেষ্ট ছিল। সংখ্যালঘু উন্নয়নের চেয়ে ভোটের অঙ্কে সুবিধা পাওয়াই যেন ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। 

পরবর্তীতে এই পথ অনুসরণ করে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল—যেমন বিহারে লালু প্রসাদ যাদবের আরজেডি, উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংয়ের সমাজবাদী পার্টি—সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই নিজেদের জমি মজবুত করেছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সেই পুরনো জনসংঘ থেকে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়ে হিন্দু ভোটকে কেন্দ্রীভূত করে ক্ষমতার কেন্দ্রে উঠে আসে। 

বিজেপি যখন হিন্দুত্বকে সামনে রেখে এগোচ্ছে, তখন সংখ্যালঘু ভোট তাদের থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে।

বাংলায় এই চিত্র আরও স্পষ্ট। ৩৪ বছর ধরে বামফ্রন্টের ক্ষমতার ভিত ছিল সংখ্যালঘু ভোট। ২০১১ সালে ক্ষমতার পালাবদলে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস সেই ভোটের স্রোত ধরে রাখতেই আরও সক্রিয়ভাবে সংখ্যালঘু তোষণের পথে হাঁটলো। 

একসময় বিজেপির জোটসঙ্গী থাকলেও, ক্ষমতায় আসার পর মমতা নিজেকে সংখ্যালঘু হিতৈষী প্রমাণে উদগ্রীব।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২৮%। মোট ভোটারের প্রায় ২০% ভোটদান থেকে বিরত থাকেন, ফলে কার্যকর ভোটের অঙ্কে যে দল ৪৫% পাবে, তারই জয় নিশ্চিত। 

এই ২৮% ভোট যদি একদলের পক্ষে যায়, তাহলে বাকি ১৭% সংগ্রহ করাও তেমন কঠিন নয়। এখানেই রাজনীতির অঙ্কে সংখ্যালঘু ভোট ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে ওঠে।

তৃণমূল যেমন মুসলিম ভোটে একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রাখতে চায়, তেমনি চেষ্টা করে বিজেপি যেন কোনোমতেই সেই ভোট না পায়। ফলে, মুসলিম ভোট যাতে কংগ্রেস বা সিপিএমের দিকে না যায়, তার জন্য একধরনের নাটকীয় হিতৈষী মনোভাব প্রদর্শন করে তারা। 

কিন্তু বাস্তব বলছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে।

ভোটের অঙ্কে জয় পেতে রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করেছে, তাতে প্রকৃত উন্নয়নের চেয়ে প্রতিশ্রুতি আর তোষণের রাজনীতিই বেশি স্পষ্ট হয়েছে। 

গণতন্ত্রে ভোট গুরুত্বপূর্ণ, তবে উন্নয়নের অঙ্কে মানুষই শেষ কথা। সেই অঙ্কে রাজনৈতিক দলগুলো এখনও ফেল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url