রঘুনাথপুর পুরবোর্ড ভেঙে দিল রাজ্য সরকার।
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পুরসভায় কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার হঠাৎ করেই ভেঙে দিয়েছে রঘুনাথপুর পুরবোর্ড। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহকুমা শাসককে।
ঘটনাটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তকে ‘গণতন্ত্রের উপর আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন।
সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মোট ১০ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ৬ জন চেয়ারম্যান তরণী বাউরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান।
অভিযোগ, গত দেড় বছর ধরে পুরসভায় ব্যাপক দুর্নীতি চলছে এবং তার সমস্ত প্রমাণ জেলা নেতৃত্বের কাছে জমা দেওয়া হলেও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অবশেষে ২১ মে অনাস্থা সভা ডাকার জন্য তিনজন কাউন্সিলার স্বতন্ত্রভাবে চিঠি দেন মহকুমা শাসকের কাছে।
এই অনাস্থা সভা ডাকার আগেই রাজ্য পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তর রঘুনাথপুর পুরবোর্ড ভেঙে দেয়। প্রশাসনিকভাবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা সভা না ডাকার কারণে কাউন্সিলারদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বোর্ডকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরিয়ে প্রশাসক বসিয়েছে যাতে দুর্নীতির অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়া যায়।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় কংগ্রেস ও বিজেপি কাউন্সিলাররা একযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
কংগ্রেস কাউন্সিলার দেবযানী পরামানিক বলেন, “এভাবে বোর্ড ভেঙে দিয়ে তৃণমূল সরকার প্রমাণ করল তারা স্বৈরতান্ত্রিক পথেই হাঁটছে।”
বিজেপি কাউন্সিলার দীনেশ শুক্লা বলেন, “তৃণমূল যে চোরদের দল, সেটাই আবার প্রমাণ হল। গণতান্ত্রিকভাবে গঠিত বোর্ড ভেঙে দিয়ে জনগণের রায়কে অপমান করা হয়েছে।”
এই ঘটনা পূর্বের ঝালদা পুরসভা ইস্যুর সঙ্গেও তুলনা টেনেছে রাজনৈতিক মহল। সেখানেও অনুরূপ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বোর্ড ভেঙেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন বোর্ড গঠিত হয়। কিন্তু রঘুনাথপুরে সেই সুযোগও দেওয়া হল না।
বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলারদের মতে, পুরসভার চেয়ারম্যান ও এক্সিকিউটিভ অফিসারের বিরুদ্ধে কঠিন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দলীয় স্বার্থে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অনাস্থার পক্ষে থাকা কাউন্সিলার প্রণব দেওঘরিয়া ও মৃত্যুঞ্জয় পরামানিক জানান, তলবি সভার আগে কাউন্সিলারদের কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করেই বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদের দাবি, প্রশাসক বসলে সাধারণ মানুষ পরিষেবা পাওয়ায় সমস্যায় পড়বেন। নর্দমা সাফাই, পানীয় জল সরবরাহ বা শংসাপত্র সংগ্রহ—এসব কাজের জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে পুরবাসীকে।
নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেসব কাজ দ্রুত করতে পারতেন, তা প্রশাসনের হাতে সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়াবে।
এই ঘটনার রাজনৈতিক পরিণতি ভবিষ্যতে রঘুনাথপুরের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।