রাজ্যে প্রথম কৃতিত্ব, সোনাথলির বিক্রমজিৎ ব্যানার্জীকে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা।

পুরুলিয়া জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে এল এক গর্বের দিন। ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফলাফলে রাজ্যস্তরে প্রথম স্থান অধিকার করল কাশীপুর থানার সোনাথলি গ্রামের ছাত্র বিক্রমজিৎ ব্যানার্জী। 

sonathli bikramjit banerjee

তার এই অসামান্য কৃতিত্ব পুরুলিয়াবাসীকে যেমন গর্বিত করেছে, তেমনি রাজ্যজুড়ে ছড়িয়েছে প্রশংসার জোয়ার।

সোনাথলি কালাপাথর হাইস্কুলের ছাত্র বিক্রমজিৎ এ বছর ভোকেশনাল স্ট্রিমের এগ্রিকালচার বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল। 

তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। শুক্রবার উচ্চমাধ্যমিক ভোকেশনাল বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হলে জানা যায়, সে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

সাধারণত মূল ধারার (General) উচ্চমাধ্যমিকের তুলনায় ভোকেশনাল বিভাগ অনেক সময় আলোচনার বাইরে থেকে যায়। 

কিন্তু বিক্রমজিতের এই কৃতিত্ব দেখিয়ে দিল, সুযোগ এবং প্রতিভা দুটোই থাকলে যেকোনো বিভাগ থেকেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব।

প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজ্যের শীর্ষে

বিক্রমজিতের বাড়ি কাশীপুর থানার অন্তর্গত সোনাথলি গ্রামে। সেখানে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের সুবিধা সীমিত হলেও, শিক্ষার প্রতি তার অদম্য আগ্রহ ও পরিশ্রম তাকে রাজ্যসেরা করে তুলেছে। 

স্কুল শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বিক্রমজিত অত্যন্ত মনোযোগী, শান্ত স্বভাবের এবং নিয়মিত পাঠ্যবইয়ের বাইরে গিয়েও পড়াশোনা করত।

তার পরিবার এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবার। বাবা-মা দুজনেই শিক্ষিত না হলেও পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝে ছেলেকে সবসময় উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। 

ছেলের এই অভাবনীয় সাফল্যে আনন্দে চোখে জল এসেছে মায়ের। বাবা বলেন, “ছেলেকে আমি সবসময় বলেছি, চেষ্টা করলে কিছুই অসম্ভব নয়।”

মুখ্যমন্ত্রীর অভিনন্দন

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিক্রমজিতের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। তিনি নিজের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিক্রমজিৎকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, “তোমার এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। ভবিষ্যতেও তুমি আরও উন্নত শিক্ষায় এগিয়ে গিয়ে সমাজ ও দেশকে গর্বিত করবে, এই কামনা করি।”

এছাড়াও জেলা প্রশাসন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বহু বিশিষ্টজন বিক্রমজিতের সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, তার জন্য একটি বিশেষ সম্বর্ধনার আয়োজন করা হবে।

উদাহরণ হয়ে উঠল বিক্রমজিত

আজকের দিনে যখন অনেক ছাত্রছাত্রী শুধুমাত্র শহরের ভালো স্কুলে পড়াশোনাকে সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি মনে করে, তখন বিক্রমজিতের মতো প্রত্যন্ত গ্রামের এক ছাত্র ভোকেশনাল বিভাগের মতো কিছুটা উপেক্ষিত স্ট্রিম থেকে রাজ্যসেরা হয়ে প্রমাণ করে দিল, শিক্ষা মানেই শহর নয়—মনোভাব ও পরিশ্রমই আসল চাবিকাঠি।

পুরুলিয়ার শিক্ষা-ইতিহাসে বিক্রমজিৎ ব্যানার্জী একটি উজ্জ্বল নাম হয়ে থাকবেন। তার সাফল্য আরও বহু ছাত্রছাত্রীকে উৎসাহ দেবে, সাহস জোগাবে নতুন স্বপ্ন দেখতে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url