চিকিৎসক নেই কম্পাউন্ডারকেও করা হল বদলি — ক্ষোভে ফুঁসছে কাশীপুরের মানুষ।

🗓️ প্রতিবেদন: আজকের পুরুলিয়া | এলাকা: কাশীপুর, তালাজুড়ি

📍 কাশীপুর ব্লকের তালাজুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘিরে জন্ম নিয়েছে প্রবল অসন্তোষ। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের অভাবে চলছিল কাজ, ভরসা ছিল একমাত্র হোমিওপ্যাথি কম্পাউন্ডার। এখন তাকেও বদলি করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুব্ধ ৫০টিরও বেশি গ্রামের মানুষ।

chikitsok nei compoundarkeo bodli


🏚️ ৫০টিরও বেশি গ্রামের একমাত্র ভরসা — তালাজুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র

পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর ব্লকের চারটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল — কালিদহ, বড়রা, মনিহারা ও গৌরাঙ্গড়ি। এই অঞ্চলগুলির আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ৫০টিরও বেশি গ্রাম, যাদের একমাত্র চিকিৎসা ভরসা ছিল তালাজুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি যখন চালু হয়, তখন সেখানে ছিল পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, ওষুধপত্র ও ইনডোর পরিষেবা। গর্ভবতী মহিলারা এখানে নিরাপদে প্রসব করাতেন। তবে সব কিছুর শুরুতেই ছিল ‘উন্নয়নের’ ছাপ — আর এখন সেই ‘উন্নয়ন’ যেন হয়ে উঠেছে শুধু অতীত স্মৃতি।


⛔ ১১ বছর ধরে বন্ধ ইনডোর পরিষেবা, চিকিৎসকের দেখা নেই

তালাজুড়ির এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইনডোর পরিষেবা বন্ধ হয়েছে আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগে। তারপর থেকে কোনওরকম উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে আছেন মাত্র একজন এলোপ্যাথি চিকিৎসক, কিন্তু তিনি নিয়মিত আসেন না। কখনও-সখনও তাঁর দেখা মেলে।

তাই দিনদিন ভরসা হয়ে উঠেছিলেন একজন হোমিওপ্যাথি কম্পাউন্ডার। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবায় তিনিই হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম অবলম্বন। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ও নির্ভরতা ছিল তাঁর ওপর।


😔 বদলি হলেন সেই কম্পাউন্ডার, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মানুষ

সম্প্রতি সেই কম্পাউন্ডারকেও তালাজুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে কালিদহ, বড়রা, মনিহারা, গৌরাঙ্গড়ি অঞ্চলে।

স্থানীয় মানুষের ভাষায় —

"চিকিৎসা ছাড়া মানুষ বাঁচবে কীভাবে? স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখে কি আর সুস্থ হওয়া যায়?"

চঞ্চল হালদার (গৌরাঙ্গডি), নবীন মাহাত (কালিদহ), নয়ন বাস্কে প্রমুখ বলেন —

“এই অঞ্চলের মানুষজন চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল তালাজুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর। আগে যেমন চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ ছিল, এখন কিছুই নেই। একমাত্র ভরসা ছিলেন যিনি, তাকেও সরিয়ে দেওয়া হল!”


📝 লিখিত দাবিপত্র ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে

ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত আকারে আবেদন জানিয়েছেন যেন কম্পাউন্ডারকে এখানেই রাখা হয়।

তাদের দাবি:

  • 🔁 কম্পাউন্ডারের বদলির নির্দেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে

  • 🏥 তালাজুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইনডোর পরিষেবা পুনরায় চালু করতে হবে

  • 👩‍⚕️ নিয়মিত চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করতে হবে

  • 💊 পর্যাপ্ত ওষুধ ও যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে হবে


📢 স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য

কাশীপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডঃ প্রিয়দর্শী যশ জানান —

“ডেলিভারী পরিষেবা আবার চালু করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরে জানানো হয়েছে। কম্পাউন্ডারের বদলির আবেদনও উপরমহলে পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষা চলছে।”


😠 মানুষের প্রশ্ন — 'উন্নয়নের' জেলায় এমন চিত্র কেন?

পুরুলিয়া জেলাকে ১০০% উন্নয়নের জেলা বলে প্রচার করা হয়। অথচ তালাজুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নেই প্রসব কেন্দ্র, নেই ওষুধ — তবু বদলি করা হয় একমাত্র ভরসার মানুষটিকেও।

এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ বলছেন,

"উন্নয়নের নামে চোখে ধুলো দেওয়া হচ্ছে। কাগজে উন্নয়ন থাকলেও মাটিতে নেই কোনো ব্যবস্থা।"


🧾 সারসংক্ষেপে তালাজুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংকট

বিষয় বর্তমান অবস্থা
ইনডোর পরিষেবা ১১ বছর ধরে বন্ধ
স্থায়ী চিকিৎসক নেই / অনিয়মিত
নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী অপ্রতুল বা অনুপস্থিত
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বহুদিন ধরে নেই
কম্পাউন্ডার সদ্য বদলি
গ্রাম সংখ্যা (নির্ভরশীল) ৫০টিরও বেশি গ্রাম
স্থানীয় দাবী বদলি বাতিল, ইনডোর চালু

মানুষের চাহিদা খুব বেশি নয়... শুধু বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু। 🧍‍♀️🧍‍♂️

এই প্রতিবেদন কেবল তালাজুড়ির নয়, এই প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি সেই অঞ্চলের যেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। আর প্রশ্ন থেকে যায় — “এভাবে কি স্বাস্থ্য পরিষেবা চলে?



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url