তালাবন্দী হিমঘর খোলার দাবিতে সিপিএমের ডেপুটেশন বিডিওর কাছে।
ব্লক জুড়ে কৃষকদের কাঁচা সব্জী সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা তালাবন্দী হিমঘরটি অবিলম্বে চালু করার দাবিতে বিডিওর কাছে ডেপুটেশন দিল সিপিএম।
শুক্রবার বলরামপুর ব্লকের বিডিও কার্যালয়ে এই ডেপুটেশন জমা দেন সিপিএম নেতা মহঃ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
বাঘমুন্ডি, বলরামপুর ও বরাবাজার ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষকেরা চাষ করেন টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লঙ্কা সহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সব্জি।
কিন্তু হিমঘরের অভাবে সেগুলো সংরক্ষণ করা যায় না। বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে হয় ফসল।
এই সুযোগে ঝাড়খণ্ডের টাটা, রাঁচী, ধানবাদ ও বোকারো থেকে আসা বড় ব্যবসায়ীরা কম দামে সব্জি কিনে নিয়ে গিয়ে নিজেদের রাজ্যের হিমঘরে মজুত করছেন। পরে সেই সব্জি উচ্চ দামে বিক্রি করে মুনাফা করছেন তারা।
চাষীদের অভিযোগ, উড়িষ্যা থেকেও অনেক ব্যবসায়ী পুরুলিয়ার সব্জি কম দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বলরামপুরে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হিমঘরটি ১২ বছর ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
অযত্নে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি, দেয়ালে জমেছে শ্যাওলা, চারপাশে জন্মেছে আগাছা।
সিপিএম নেতা মহঃ ইব্রাহিম জানান, ২০১০ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বলরামপুর বাজার সমিতির সাপ্তাহিক হাটে এই হিমঘর তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
তৎকালীন কৃষি বিপণন দপ্তর এই প্রকল্প গ্রহণ করে এবং কোটি টাকা বরাদ্দ করে। নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার কিছুদিন পরেই হিমঘরের মিটার রুমে আগুন লাগে। তারপর থেকেই তালা পড়ে রয়েছে হিমঘরে। এখনও পর্যন্ত তা আর খোলেনি।
চাষীদের বক্তব্য, হিমঘরটি যদি চালু থাকত, তাহলে অবিক্রিত সব্জি সংরক্ষণ করে পরে সঠিক দামে বিক্রি করা যেত। ঝাড়খণ্ড বা উড়িষ্যার ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হত না।
বরং এখান থেকেই বাজারে সরবরাহ করে লাভবান হওয়া যেত। তারা বলেন, শীতকালে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত টমেটো, বাঁধাকপি ও অন্যান্য সব্জি পাইকারি দামে ২-৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়।
সেইসব সব্জিই পরে ঝাড়খণ্ড থেকে এনে পুরুলিয়ার বাজারে বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকা কেজিতে।
চাষীদের আরও অভিযোগ, শুধুমাত্র বলরামপুর হিমঘরই নয়, জেলার বহু কিষাণ মান্ডি ও কৃষক বাজার তালাবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
সরকারি অর্থে নির্মিত হলেও তা কৃষকের কাজে আসছে না। সমস্ত রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে হিমঘর চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও, নির্বাচন মিটলে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয় না।
সিপিএমের দাবি, সরকারি অর্থ ও কৃষকের স্বার্থে নির্মিত হিমঘরটির দ্রুত মেরামত ও পুনরায় চালু করা হোক। এই দাবিতেই তারা ব্লক প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।
জেলা প্রশাসনের তরফে এখনও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম।