রাঙ্গা গ্রামের পানীয় জলের সংকটে চরম দুর্ভোগ, পঞ্চায়েত কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিক্ষোভ।

বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়ের আদিবাসী অধ্যুষিত রাঙ্গা গ্রামে পানীয় জলের সংকট দিন দিন ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করছে। 

দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে নলকূপ ও সৌরচালিত জল প্রকল্প বিকল থাকার কারণে এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়েছেন।

parulia ranga gram e panio sangkte bikkhob

রাজ্য ও ভিন রাজ্যের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলেও আদিবাসী মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা চরম পর্যায়ে। 

শুক্রবার সকাল থেকে গ্রামের কয়েকশ মানুষ হাঁড়ি, কলসি ও বালতি নিয়ে রাঙ্গা ফুটবল ময়দানের সামনে রাস্তা অবরোধ করে।

গ্রামের মহিলা ও পুরুষরা বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভের মাধ্যমে তাদের দাবি জানাতে শুরু করেন। তারা জানান, রাঙ্গা গ্রামে প্রায় ৬০০ পরিবার বসবাস করছে, যারা প্রধানত আদিবাসী। 

গ্রামের দু’টি সৌরচালিত পানীয় জল প্রকল্প এবং কয়েকটি নলকূপ থাকলেও দীর্ঘ কয়েক মাস যাবত সেগুলো সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়েছে। 

তীব্র গরমে গ্রামে পানির অভাব চরমে, ফলে ডোভা বা বয়ে আসা ঝর্ণার জলই পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

বিকল নলকূপের কারণে পানীয় জল সংগ্রহ করতে গ্রামের মানুষদের অনেক দূর, এক থেকে দুই কিলোমিটার পেরিয়ে চড়াই-উৎরাই পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। 

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জল আনতে গিয়ে শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি জল দূষিত হওয়ার ফলে গ্রামে নানা পেটের রোগ ছড়াচ্ছে, যা শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাইকে প্রভাবিত করছে।

গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বহুবার তারা পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের কাছে এই সংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও পাম্প মেরামত বা জল সরবরাহের কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা এই বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছেন।

বিক্ষোভের সময় তারা অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাদের শর্ত ছিল, বিকল নলকূপ ও সৌরচালিত জল প্রকল্পের পাম্প সারাই না হওয়া পর্যন্ত পঞ্চায়েত কার্যালয়ের তালা খুলবেন না। 

তারা প্রশাসনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করতে চান না, কারণ পূর্বেও অনেকবার আশ্বাস পাওয়া সত্ত্বেও বাস্তবায়ন হয়নি।

রাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দাদের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ফলে প্রশাসনের অনেকেই পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। 

পুলিশ ও পঞ্চায়েত প্রধান অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। কিন্তু গ্রামবাসীরা বলে, “আমাদের নলকূপ ঠিক না হলে আমরা রাস্তা খুলবো না।”

দীর্ঘ ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা চলা এই অবরোধ শেষে প্রশাসন অবশেষে নলকূপ ও সৌরচালিত পাম্প মেরামতের কাজ শুরু করলে রাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা অবরোধ তুলে নেন এবং পঞ্চায়েত কার্যালয়ের তালাও খুলে দেয়া হয়।

অযোধ্যা পাহাড়ের এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেড়ে ওঠার মধ্যে স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা উপেক্ষিত হওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে এখনো যথাযথ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ হয়নি। 

প্রশাসনের উচিত হবে পর্যটন উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, যাতে তারা সুস্থ এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে।

এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়, পর্যটন উন্নয়ন এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন একসঙ্গে না গেলে সমাজে নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। 

রাঙ্গা গ্রামের মানুষ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। আশা করা যায়, প্রশাসনও এবার তাদের দাবি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url