যুদ্ধবিরতি বিতর্ক: জবাব না, কি কূটনীতি?
২২ এপ্রিল, পহেলগাঁও-এ ২৬ জন নিরীহ ভারতীয় পর্যটকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সমগ্র দেশের আবেগ ফেটে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হুঙ্কার—“সন্ত্রাসবাদীদের পায়ের তলা থেকে জমি কেড়ে নেব” এবং “উচিত শিক্ষা দেব”—দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিল, এবার সত্যিই বদলা আসন্ন।
প্রধানমন্ত্রীর কড়া অবস্থান ও সেনাবাহিনীর দক্ষতায় ভারত ৭ মে থেকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ শুরু করে।
দুই দিনের সামরিক অভিযানে দেশ বুঝিয়ে দিল, ভারতের সেনা শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয়, প্রতিশোধের জন্যও প্রস্তুত।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও একসুরে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। দেশজুড়ে জেগে উঠেছিল 'এসপার না হয় ওসপার'-এর মনোভাব।
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, হঠাৎ করেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেশবাসীর মনে প্রশ্নের জন্ম দেয়। যুদ্ধ থেমে গেলেও পাকিস্থান থামেনি—চলতে থাকে চার ঘণ্টার গোলাগুলি।
এই অবস্থার মধ্যেই, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকলেও আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বকে জানিয়ে দেন—তিনি যুদ্ধবিরতিতে খুশি। যুদ্ধ যে কেবল ধ্বংস ডেকে আনে, সেটাই তিনি মনে করিয়ে দেন।
তবে প্রশ্ন উঠছে—এই মানবিকতা কেবল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেই কেন? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে।
হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, লক্ষ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি—তবু সেখানে ট্রাম্প বা বিশ্বশক্তিগুলোর মানবতাবোধ তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়।
ইজরায়েল-হামাস, তালিবান-আফগানিস্তান কিংবা বালুচিস্তানের পৈশাচিক পরিস্থিতি—সবই যেন পাশ কাটিয়ে যায় মার্কিন কূটনীতি।
আরও আশ্চর্যের বিষয়, ভারত যুদ্ধ থামানোর আগেই ট্রাম্পের মুখ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শোনা যায়। এর অর্থ কি, ভারতের মতো একটি সার্বভৌম দেশ অন্যের নির্দেশে নিজের প্রতিরক্ষা নীতিতে ছেদ টানছে?
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আচরণ, তাঁর পূর্বঘোষিত দৃঢ় অবস্থানের সঙ্গে বেমানান ছিল। ফলত, বিরোধীরাও এটিকে রাজনৈতিক সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে।
রাহুল গান্ধীর বক্তব্য—“ইন্দিরা গান্ধী যা পেরেছিলেন ১৯৭১ সালে, মোদী তা পারলেন না এত শক্তিশালী সেনা পেয়েও”—আজ আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে।
সত্যিই কি যুদ্ধ থামিয়ে আমরা আত্মসম্মান হারালাম? সেনাবাহিনীর মনোবল কি ভেঙে গেল? নাকি মোদী কূটনৈতিক চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো এখনই নয়, ভবিষ্যতের ইতিহাস দেবে। তবে এটা স্পষ্ট, দেশের মানুষের আবেগ, সেনার আত্মত্যাগ ও জাতীয় স্বার্থ—সব মিলিয়ে এ যুদ্ধবিরতি সিদ্ধান্ত বহুদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রে থাকবে।