স্বমহিমায় ফিরতে হবে সংবাদ মাধ্যমকে: অনুব্রত কাণ্ডে চতুর্থ স্তম্ভের দিশাহীনতা।
✍️বোলপুরের অনুব্রত কাণ্ডে পুলিশ ও সংবাদ মাধ্যমের সংঘর্ষে প্রশ্নের মুখে তথাকথিত চতুর্থ স্তম্ভ। স্বমহিমায় ফিরবে কি সংবাদ মাধ্যম? বিশ্লেষণ পড়ুন।
🎤 ভূমিকা:
✍️বর্তমান সময়ে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যেখানে একসময় সংবাদ মাধ্যম ছিল নির্ভীক তথ্য প্রচারের প্রতীক, আজ তা যেন এক টুকরো বিরিয়ানি, একটি শাড়ি বা পাঁচশো টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতার কাছে। বোলপুরের অনুব্রত কাণ্ড আবারও সেই চিত্র তুলে ধরল সমাজের সামনে।
🔥 ঘটনার সূত্রপাত:
বোলপুর থানার আই.সি. লিটন হালদারকে এক উচ্চপদস্থ সংবাদকর্মী দুর্নীতির অভিযোগে প্রকাশ্যে অপমান করেন – যাঁর ভাষা ছিল যেন একটি অডিও গালিগালাজের গান।
মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ নেতার এহেন ভাষা ব্যবহার শোরগোল তো তুলেছিলই, সঙ্গে সঙ্গে সেই অডিও পৌঁছে যায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের হাতে।
একটি বাংলা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম, হাতে পাওয়া সেই অডিও ক্লিপ ফলাও করে প্রচার শুরু করে। কেবল অডিও নয়, কম্পিউটারে বানানো ছবি জুড়ে দিয়ে সেই ভিডিওকে করে তোলে আরও 'ভাইরাল' উপযোগী।
🧾 তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া ও নাটকীয় মোড়:
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব তখন বিপাকে পড়ে অনুব্রত মণ্ডলকে নির্দেশ দেন ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তবে তিনি যা করলেন তা ছিল ক্ষমা নয়, বরং আই.সি.-কে 'ক্ষমা করে দিলেন' বলে নিজের মত জানিয়ে দলের সভাপতিকে চিঠি দিলেন।
দল সন্তুষ্ট। পুলিশ প্রশাসনও গালাগাল খাওয়া আই.সি.-র সম্মান রক্ষা করতে মামলা ঠুকে দিল অনুব্রতের নামে।
তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো, যে সংবাদ মাধ্যমটি সেই অডিও প্রচার করে তৃণমূল ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছিল, তাকেই চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দিল পুলিশ। যেন সংবাদ মাধ্যমই আসল দোষী! 💥
🏛️ সংবিধান কি সংবাদ মাধ্যমকে ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ বলে স্বীকৃতি দেয়?
না। ভারতের সংবিধানে কোথাও বলা নেই সংবাদ মাধ্যম হলো রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’। এই তকমা সংবাদ মাধ্যম নিজেরাই নিজেদের দিয়েছে।
অথচ এখন সেই সংবাদ মাধ্যমের উপর প্রতিনিয়ত চাপ, রাজনৈতিক হুমকি এবং উপঢৌকন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়।
👞 লালু প্রসাদ যাদবের মন্তব্য মনে আছে? সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিনিধি সংসদের বাইরে লাথি মারার কথা বলেছিলেন তিনি! এটাই প্রমাণ করে সংবাদ মাধ্যমের মর্যাদা কীভাবে দিনে দিনে অবনমন হয়েছে।
💸 সংবাদমাধ্যমের তথাকথিত বোনাস ও শাড়ি উপঢৌকন:
একদিকে সাংবাদিকদের জন্য বছরে হাজার টাকা বোনাস, পূজার সময় জামা-প্যান্ট, স্ত্রীর জন্য শাড়ি – এসব কিছুই করে সংবাদ মাধ্যমকে নিজেদের পকেটে রাখার চেষ্টায় মেতে উঠেছে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও প্রশাসনিক ব্যক্তি।
আর যারা এই উপঢৌকনে খুশি হয়ে পা চেটে দেয়, তারা তো নিজেদের সম্মান নিজেরাই নষ্ট করছে।
🚫 জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের নিরবতা ও ভণ্ডামি:
অনুব্রত কাণ্ডে যেখানে বোলপুর উত্তাল, দিল্লির বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবর ছুঁতেও চায়নি। অথচ একটি নববিবাহিত নারী স্বামীকে খুন করাল – সেই সংবাদকে সাতদিন ধরে রসালো করে পরিবেশন করা হলো দেশের প্রতিটি স্ক্রিনে।
👩🏫 এদিকে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী রাস্তায় চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে – সে খবর তেমন গুরুত্ব পেল না।
💬 জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা:
যদি সংবাদ মাধ্যম সঠিক পথে না চলে, তাহলে শুধু পুলিশ নয়, গলির কুকুর পর্যন্ত প্রতিবাদ জানাবে এই তথাকথিত চতুর্থ স্তম্ভের বিরুদ্ধে।
সংবাদ মাধ্যমের উচিত – সত্যকে তুলে ধরা, স্বাধিকার রক্ষা করা এবং কোনও পক্ষপাতিত্ব না করা।
🧭 সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলা – সেটাই সংবাদ মাধ্যমের ধর্ম হওয়া উচিত।
✅ উপসংহার: ফিরতে হবে স্বমহিমায়
সংবাদ মাধ্যমকে অবশ্যই ফিরতে হবে তার নিজস্ব মর্যাদা ও নিরপেক্ষতার পথে। যেদিন সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারে একজোট হবেন, সেদিন কোনও রাজনৈতিক শক্তি বা পুলিশ প্রশাসন তাদের ভয় দেখাতে পারবে না।
🔁 এখনই সময় নিজেদের প্রশ্ন করা – আমরা কি সত্যিই চতুর্থ স্তম্ভ, নাকি শুধুই একজন সুবিধাবাদী পরিবেশক?
✍️ আপনার মতামত জানান কমেন্টে – আপনি কি মনে করেন আজকের সংবাদ মাধ্যম নিরপেক্ষ আছে?